বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাট সেতু নির্মাণের সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বাস্তবায়নের পথে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। গতকাল সকাল ১০টায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবিতে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সেতু নির্মাণের স্থান, নকশা, ব্যয় ও নির্মাণকাল নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবনা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছে দাতা সংস্থা কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। বৈঠকে নতুন সেতুর প্রস্তাবিত নকশা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন ডিজাইনে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে পাঁচগুণের বেশি। ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে দ্বিতল বিশিষ্ট পদ্মা সেতুর আদলে। আগামী আগস্ট মাসে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তারপর ডিজাইন শেষে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগবে ৭-৮ মাস। এ বছরেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, পদ্মা সেতুর আদলে এ সেতু নির্মিত হবে। ওপরে চলবে গাড়ি, নিচে ট্রেন। মোট তিনটি লাইন থাকবে। এ সেতুর সমস্ত ব্যয় বহন করবে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। সেতু নিয়ে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চিপ ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর মিয়া জানান, আগামী (আগস্টে) মাসে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ফাইনাল ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট জমা দেবে। এখন যে সেতু রয়েছে সেখান থেকে হালদার উজানের দিকে ৭০ মিটার দূরে নতুন সেতুটি নির্মিত হবে। এছাড়াও একটি সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে, সেটি করবে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে। প্রাথমিকভাবে সেতুর দৈর্ঘ্য আমাদের বলা হয়েছে ৭৮০ মিটার, বায়াডাক্ট ৫ দশমিক ৬২ মিটার। স্পেন হবে ১০০ মিটার। সেতুর উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২ মিটার। দাতা সংস্থার প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে কাজ শুরুর সময় থেকে চার বছর। একনেকে অনুমোদন, দরপত্রসহ আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে তারা সেতুর কাজ শুরু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সেতুটি নির্মাণ শেষ হতে বর্তমান সময় থেকে পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতুর বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি নিয়ে গতকাল সিআরবিতে রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কোরিয়ান প্রতিনিধিদের এই বৈঠকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদও উপস্থিত ছিলেন। গতকালের বৈঠকে কালুরঘাট সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি বলেন, ২০১০ সালে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু উদ্বোধন করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন আমরা সিডিএর মাঠে একটা জনসভা করেছিলাম। সেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, কালুরঘাটেও একটি নতুন সেতু নির্মাণ করে দিবেন। যেটাতে একপাশে গাড়ি এবং নিচে ট্রেন চলতে পারবে। কিন্তু দীর্ঘ এগারো বছর সময় গেছে। আমার আগে যিনি এমপি ছিলেন তিনিও চেষ্টা করেছিলেন, হয়নি। বিভিন্ন জটিলতার কারণে এটি একনেকে গিয়েও ফেরত এসেছে। তখন কিন্তু খরচও অনেক কম ছিল। শেষ পর্যন্ত আমি দায়িত্বে আসার পর এটি নিয়ে আবার কাজ শুরু করলাম। পরে নকশার জন্য টেন্ডার হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একনেকের মিটিংয়ে বললেন, এটি আবার রিভাইস করে আনার জন্য। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। লেখা হয়েছিল দুইটা সেতু করার কথা, একটা রেলসেতু আরেকটা সড়ক সেতু। পরবর্তী সময়ে ওই নকশা করে যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যায় তখন তিনি বলেন, আমি তো এরকম বলিনি, একটিই সেতু হবে। সেটিতে গাড়ি ও ট্রেন উভয় চলবে। এছাড়া দুইপাশে দুই মিটার করে চার মিটার হাঁটার রাস্তা থাকবে।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইউশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার কোণ উক পার্ক, কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা, ডেভেলাবমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিঃ এর সিনিয়র ইঞ্জিয়ার মো. আনোয়ারুল হক, ডেভেলাবমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিঃ এ জেনারেল ম্যানেজার মো. রিয়াজুর রহমান, সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
Leave a Reply